নিকলীর তালপাখা যাচ্ছে সারাদেশে
২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৫ এএম
বিদ্যুতের আলো পৌঁছায়নি এমন দুর্গম গ্রামে কিংবা লোডশেডিং মাখা নগর জীবনে শীতল পরশ বুলিয়ে দেয় হাতপাখা। তালপাতার তৈরি এই হাতপাখার সঙ্গে জড়িয়ে আছে কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলার দামপাড়া গ্রামের প্রায় ২শ’ পরিবারের জীবন-জীবিকা।
এখানকার তালপাখা যাচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায়।
প্রতিবছরের চৈত্র, বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ মাসে তালপাখার চাহিদা বেড়ে যায়। তখন নিকলীর দামপাড়া গ্রামের নোয়ারহাটি, টেকপাড়া ও বর্মনপাড়ায় ঘরে ঘরে পাখা তৈরির ধুম পড়ে যায়। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কারিগরেরা বাড়ির উঠানজুড়ে দল বেঁধে তালপাখা তৈরির কাজ করেন। তবে এই তিন মাসের তালপাখার বাজারকে কেন্দ্র করে কারিগরেরা ব্যস্ত থাকেন বছরের অন্য সময়ও। এবার লোডশেডিং বেশি থাকায় এবং প্রচন্ড গরমের কারণে তালপাখার চাহিদাও বেড়েছে। সারাদেশে যাচ্ছে দামপাড়া গ্রামের প্রাণ জুড়ানো দেহ শীতল করার এই হাতপাখা।
সরেজমিনে গতকাল শুক্রবার সকালে দামপাড়া গ্রামে দেখা যায়, সেখানে তালপাখা বানানোর ধুম লেগেছে। ছেলে-বুড়ো, কিশোর-কিশোরী, বসে নেই কেউ।
ঘরের বউ-ঝিয়েরা তালের পাতাগুলো দা দিয়ে ফালি করে বেতি করছেন। এগুলো বুনন করে কেউ ছাঁটাই আকৃতি করে নিচ্ছেন। কেউ মোড়ল বাঁশ কেটে, ছেঁটে হাতল তৈরি করে দিচ্ছেন। কেউ প্লাস্টিকের বেত ও সুতা দিয়ে জালি বেতের সাথে ছাঁটাই বা ছাঁচ সেলাই করে হাতপাকার আকৃতি দিচ্ছেন। কেউ বসেছেন রংয়ের তুলি নিয়ে।
আর এই কাজগুলো করা হচ্ছে দল বেঁধে। ঘরের বারান্দায় কিংবা বাড়ির উঠোনে গাছের ছায়ায় বসে।
কথা হয় গ্রামের সবচেয়ে বয়স্ক নারী আশুলতা রায়ের (৮০) সঙ্গে। তিনি জানান, ৬০ থেকে ৭০ বছর ধরে এ গ্রামে তালপাখা তৈরি হচ্ছে। ১২ বছর বয়সে তার বিয়ে হয়। শাশুড়ির হাত ধরে তিনি তালপাখা তৈরির কাজ শিখেন।
আশুলতা বলছিলেন, ‘গ্রামে পর্থম আমরার এই ঘরে (নিজদের ঘর দেখিয়ে) আমার শাশুড়ি তালপাখা বানাইত। শাশুড়ির কাছ থেকে আমি শিখছি।
আমার কাছ থেকে পরে গ্রামের প্রায় সবাই শিখছে। এহন আমার বয়স অইছে, পারি না। আমার বউয়াইনে এবং নাতি-নাতকররা এহন তালপাখা বানায়।
গ্রামের ভানুমতি সূত্রধর (৭৮) বলেন, ‘৫০-৬০ বছর ধইরা আমরা হাতপাখা তৈরির কাজ করতাছি। ৭১ সালে এই গ্রামে পাকবাহিনী আক্রমণ করে। তহন আমাদের অনেকের স্বামীরে মাইরা ফালায়। আমরা বিপদে পইরা যাই। তহন কি কইরা চলবাম। এই কাজ কইরাই আমরা সংসার চালায়া আইতাছি। এহন আমার পুতের বউ, নাতিরাও এই কাজ করে।
বাড়ির শিশুরাও উঠানে বসে হাতপাখা তৈরির কাজে সহযোগিতা করেন। পাকিস্তান আমল থেকে এখানকার কারিগরেরা হাতপাখা তৈরি করে জীবিকা চালাচ্ছেন। তিন পুরুষ ধরে এ পেশায় সংসার চালাচ্ছেন গ্রামবাসী। বংশপরম্পরায় এ গ্রামে এখনো কিশোর তরুণ বয়সীরা পাখা তৈরির পেশা বেছে নিচ্ছে।
তালপাখার কারিগর অলকা রায় বলেন, ‘আমরার গ্রামে এই পেশায় ২০০ পরিবার জড়িত। আমরার অন্য কোনো পেশা নাই। অন্য কোন কাজ পারিও না। বাপ-দাদার এই পেশাটাই আমরা ধইরা রাখছি। পাংখা বানানোর জিনিসপত্রের দাম এহন অনেক বাইড়া গেছে। এগুলো জোগাড় করতে অনেকেই ঋণগ্রস্ত। সরকার যদি সুদ ছাড়া আমরারে ঋণ দিতো তাইলে অনেক উপকার হতো।
এ বিষয়ে দামপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ মো. আনোয়ার হোসেন বলেন- আমরা এ শিল্পের বিকাশ চাই, তাই আমাদের পক্ষ থেকে তাদের যতটুকু সহযোগিতা প্রয়োজন তা আমরা করছি এবং ভবিষ্যতে করে যাবো।
বিভাগ : অভ্যন্তরীণ
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
যোগীরাজ্যে মুসলিমদের ভোটদানে বাধা! ‘পিটিয়ে মারা হচ্ছে’, বিস্ফোরক মমতা
চীনের হাসপাতালে আততায়ীর ছুরির কোপে নিহত অন্তত ১০!
মৌসুম শেষে নতুন ঠিকানায় ময়েস
সরিষাবাড়ী উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অবশেষে স্থগিত
আগামী ১৯ অক্টোবর বিএফইউজে নির্বাচন
প্রশ্ন : কোনো এনজিওতে একাউন্টেন্ট পদে চাকরী করা প্রসঙ্গে।
বিতর্কিত কর্মকান্ড: ময়মনসিংহ জেলা যুব মহিলালীগের কমিটি বিলুপ্তি
বোয়িংয়ে অনিয়মের অভিযোগে তদন্ত শুরু
রাজশাহীতে ট্রেনে কাটা পড়ে নিহত ১
দেশে বিদ্যুতের চাহিদার চেয়ে উৎপাদন ক্ষমতা বেশি : নসরুল হামিদ
দোয়ারাবাজারে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় এলজিইডি কর্মকর্তা নিহত
লোকসানে শিল্প মন্ত্রণালয়ের ২৮ প্রতিষ্ঠান : সংসদে শিল্পমন্ত্রী
ঢাকায় আসছেন ডোনাল্ড লু
মুদ্রানীতি ও আর্থিকনীতি সমন্বয়ে ব্যবস্থাপনাগত দুর্বলতা আছে: ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
আফ্রিকায় ওষুধ রপ্তানিতে নজর ইরানের
এশিয়ান অনূর্ধ্ব-১৯ বিচ ভলিবল চ্যাম্পিয়ন ইরান
ভবিষ্যৎ মহামারি সামাল দিতে বিশ্বের জন্য দৃঢ় নেতৃত্ব প্রয়োজন
জেলেনস্কির কর্তৃত্ব দ্রুত কমছে: এসভিআর
জিম্বাবুয়েকে গুড়িয়ে সিরিজ বাংলাদেশের
কুষ্টিয়ায় উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে মারধর, গ্রেপ্তার ৩